রংপুর প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২১, ২২:২২
রংপুর বিভাগে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন এবং দামও বেশী পাওয়ার প্রত্যাশায় পাট চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। অনাবৃষ্টি আর প্রখর তাপদাহে শুরুটা ভোগান্তির থাকলে তা কেটে ওটার কথা জানিয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুরকে দুটি অংশে বিভক্ত করে পাট চাষের অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছে।
রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এই পাঁচ জেলা মিলে এক অঞ্চল এবং দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় মিলে অন্যটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্যমতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রংপুর অঞ্চলে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬৮ বেল। ৫৮ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি থেকে এই উৎপাদন প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৬ বেল এবং আবাদের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমি।
এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রংপুরে ৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১৬ হাজার ৯০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৯ হাজার ৬৬০ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৬৪০ হেক্টর, নীলফামারীতে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর। তার মধ্যে দেশীয় পাট ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, তোষা পাট ৫৪ হাজার ১০০ হেক্টর, মেস্তা ৩৬০ হেক্টর, কেনাফ ৫০০ হেক্টর।
এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রংপুরে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৯৩ বেল, গাইবান্ধায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৫৫ বেল, কুড়িগ্রামে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৬৬ বেল, লালমনিরহাটে ৫৬ হাজার ৬৮ বেল, নীলফামারীতে ৮৫ হাজার ৩৮৬ বেল, মোট ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬৮ বেল পাটের মধ্যে দেশীয় ৩৪ হাজার ৯২৮ বেল, তোষ ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৭ বেল, মেস্তা ২ হাজার ৬২৮ বেল, কেনাফ ৫ হাজার ৮৭৫ বেল। এপর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টর আবাদ অর্জিত হয়েছে যা গত বছর ছিল ৫১ হাজার ৭৯১ হেক্টর। এ অঞ্চলে আবাদের হার ৯৬.৪০ শতাংশ। পাট কাটা জাগ দেয়াসহ উৎপাদন প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে।
এদিকে ১৭ আগষ্ট ২০২১ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, বিভাগের পাঁচ জেলায় পাট কর্তন হয়েছে মোট ৫৬ হাজার ২২ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বেল, তন্মধ্যে রংপুরে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬৫ বেল, গাইবান্ধায় ২ লকখ ৫৬ হাজার ১০৩ বেল, কুড়িগ্রামে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৪ বেল, লালমনিরহাটে ৫৩ হাজার৪৩২ বেল, নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৫২৯ বেল (দেশীয় ৩৪ হাজার ৬০৪ বেল, তোষা ৭ লাখ ৩৯ হাজার ১২৯ বেল, মেস্তা ৭ হাজার ৬৩৮ বেল, কেনাফ ৫ হাজার ৮৯২ বেল)। শুধুমাত্র রংপুর জেলায় পাটের ৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর আবাদে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১৮ হাজার ২৯৩ বেল নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এখানে ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ হাজার ৪৩৮ বেল।
আবার রংপুর জেলার পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মেট্রোতে ৭০৫ হেক্টর আবাদে ৮ হাজার ৫১৮ বেল, সদরে ৪৫৫ হেক্টরে ৫ হাজার ৩০৪ বেল, কাউনিয়ায় ১ হাজার ১০ হেক্টরে ১২ হাজার ৪৭৪ বেল, গংগাচড়ায় ২ হাজার ৪৯০ হেক্টরে ২৯ হাজার ৯৯৬ বেল, মিঠাপুকুর ৯৫০ হেক্টরে ১১ হাজার ৫২৩ বেল, পীরগঞ্জে ২ হাজার ১৬০ হেক্টরে ২৬ হাজার ৩৮২ বেল, পীরগাছায় ৪৭৫ হেক্টরে ৫ হাজার ৭৩০ বেল, বদরগঞ্জে ৪৭৫ হেক্টরে ৫ হাজার ৭০৯ বেল, তারাগঞ্জ ১ হাজার ১১০ হেক্টরে ১২ হাজার ৬৫৯ বেল। এপর্যন্ত আবাদ অর্জন হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬৫ বেল।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের হাট বাজারে পাট উঠতে শুরু করেছে। ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকেরা। রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া এলাকার কৃষক আব্দুল বাতেন জানান, এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে পাট বোনা, পাট পরিচর্যা, পাট কাটাসহ সার্বিক খরচ হয়েছে প্রায় ১৫০০০ টাকা। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমান বাজারে মন প্রতি ৩২০০-৩৫০০ পর্যন্ত দাম পাচ্ছি। প্রাথমিক অবস্থায় বাজারে পাটের দাম সন্তোষজনক। এ উপজেলার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। গত বছর বন্যার কারণে বেশ ক্ষতি হলেও এবার পোকামাকড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো ক্ষতি করতে পারেনি যার কারনে ফলন ভালো হয়েছে। মন প্রতি ৩০০০-৩৫০০ টাকায় দাম পেয়েছি।
রংপুর পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, পাটের সেই হারানো ঐতিহ্য ও সোনালী দিন ফিরিয়ে আনার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও বীজ উৎপাদন, কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরণসহ পাট সম্প্রসারণে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। এক্ষেত্রে বীজ, সার, কীটনাশক কেনার জন্য অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে উৎপাদিত পাট বীজ সংরক্ষনের পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সময় উপযোগী পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
রংপুর বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বিধু ভূষণ রায় বলেন, গত দুই বছর হতে পাটে সন্তোষজনক মুল্য পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে, এ বছরও পাট চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও সরকার প্লাষ্টিকের ব্যাগ ও বস্তা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি ও বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় পাটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পাটের মূল্যের উর্ধ্বমুখি প্রবনতা অব্যাহত থাকায় পাট চাষে কৃষকেরা আবার আগ্রহী হয়ে উঠছে।
প্রধান সম্পাদকঃ মোহাম্মদ আবুল বশির
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মনির হোসেন
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ৩৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫
মোবাইলঃ +৮৮ ০১৮১৩ - ৮১৮৬৯৬
ফোনঃ +৮৮ ০২ - ৫৫০১৩৯৩৯
ইমেইলঃ shwapnerbd@gmail.com