shopner bd
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩০
×

চৌদ্দগ্রামে ‘হিন্দু সেজে’ জালিয়াতি, ভূমি কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

  মো. এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২১, ১৮:২৯

চৌদ্দগ্রামে ‘হিন্দু সেজে’ জালিয়াতি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ৬নং ঘোলপাশা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার নুরুল বাহার প্রকাশ বুলেট বাহার ওরফে সুভাষ দেবনাথ নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিয়ে ভারতীয় নাগরিকের জমি বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হাজী মন্তাজ উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান মজুমদার ৭ মার্চ কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলী আদালতে  ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্তরা হলেন- আবুল কাশেম, দাতা নুরুল বাহার প্রকাশ বুলেট বাহার ওরফে সুভাষ দেবনাথ, শনাক্তকারী আবদুল কুদ্দুস, সাক্ষী আবু আহম্মদ ভুঁইয়া সোহাগ, আবুল হাসান ভুঁইয়া নয়ন, ঘোলপাশা ইউপি সচিব দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, ঘোলপাশা ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান মুন্সিরহাট ইউনিয়নের তহশীলদার আবুল খায়ের ও দলিল লেখক বেতিয়ারার আবুল হাশেম।। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশ ইনভেশটিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) তদন্ত করছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী শাহজাহান মজুমদারের দাদা মৃত তরব আলী গং ১৯৬৩ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পুরান রাজবাড়ি থানার রাঙ্গামুড়া গ্রামে বসবাস করতেন। আর ক্ষিরোধ চন্দ্র সন্যাসী গং বসবাস করতেন বাংলাদেশের ঘোলপাশা ইউনিয়নের আমানগন্ডা গ্রামে। ১৯৬৩ সালের ১৭ জুলাই তরব আলী গং ক্ষিরোধ চন্দ্র সন্যাসী গংয়ের সাথে এক্সচেঞ্জ দলিল বিনিময় করে তরব আলী গং বাংলাদেশে আছেন এবং ক্ষিরোধ চন্দ্র সন্যাসী গং ভারতে চলে যান এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। এরপর থেকে তরব আলী গং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ক্ষিরোধ চন্দ্র সন্যাসী গংয়ের সাথে বিনিময় করা ১৯ শতক জায়গার উপরে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীকালে ভুলবশত বিএস জরিপে ক্ষিরোধ চন্দ্র সন্যাসীর নামটি চলে আসায় তরব আলীর ছেলে মমতাজ উদ্দিন চৌদ্দগ্রাম থানার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা করেন। মামলা নং-১১১/১৯, বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। আর এ সুযোগটি কাজে লাগান ইউপি মেম্বার নুরুল বাহার ওরফে বুলেট বাহার ওরফে সুভাষ দেবনাথ। তিনি ক্ষিরোধ চন্দ্র সন্যাসীর ছেলে ভারতীয় নাগরিক অকিন্দ দেবনাথের নামে ঘোলপাশা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ দেখিয়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভূমি তহশীলদার আবুল খায়েরের যোগসাজশে একটি নামজারি (জমা খারিজ) করিয়ে নেন। আর এ জমা খারিজে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়। দেড় মাসের ব্যবধানে অকিন্দ দেবনাথের ছেলে ভারতীয় নাগরিক সুভাষ দেবনাথের নামে একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদপত্র ও একটি জন্মসনদ দিয়ে ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে ২৬ ডিসেম্বর আরও একটি নামজারি (জমা খারিজ) করিয়ে নেন। এরপর নিজেকে সুভাষ দেবনাথ দাবি করে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি গুণবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে নুরুল বাহার তার বাড়ির পাশ্ববর্তী মৃত আবদুল গফুরের পুত্র আবুল কাশেমের নিকট ওই ১৯ শতক জায়গা বিক্রি করে দেন। যার দলিল নং-৩৩২। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুভাষ দেবনাথে বাবা অকিন্দ দেবনাথ প্রায় ১৫ বছর আগে ভারতে মৃত্যুবরণ করেন। জন্মসনদ পর্যালোচনা সুভাষ দেবনাথের বাবা অকিন্দ দেবনাথের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। আর সুভাষ দেবনাথে জন্ম ১৯৭২ সালের ২০ ডিসেম্বর। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বুলেট বাহার থানায় চলতি মাসের ২ তারিখে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, কে বা কারা ৪ ফেব্রুয়ারি গুণবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৩৩২ নং দলিলে তাকে সুভাষ দেবনাথ সাজিয়ে তার ছবি দিয়ে দলিল একটি সম্পাদন করেন। 

এদিকে নুরুল বাহার ওরফে বুলেট বাহার জমির বাদ খারিজে ব্যবহৃত ওয়ারিশ সনদে থাকা ৩ জনের নাম মুছে সেখানে নিজেকে সুভাষ পরিচয়ে জাল-জালিয়াতি ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে সপ্তাহ ব্যবধানে প্রথমে প্রায় ১৫ বছর আগে মারা যাওয়া অকিন্দ দেবনাথ ও পরে সুভাষ দেবনাথের নামে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি বাদ খারিজ করিয়ে নেন এবং আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তির নিকট মূল্যবান এ জায়গাটি বিক্রি করে দেন।

এসব বিষয়ে জানতে মামলার ১নং আসামি দলিল গ্রহীতা আবুল কাশেমকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, টাকার লোভে ভূমি অফিসগুলোতে জাল-জালিয়াতি এখন প্রতিদিনের চিত্র। তদন্ত করে এ চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের।

এ বিষয়ে গুণবতী সাব-রেজিস্ট্রার উপমা নাগ জানান, সুভাষ দেবনাথকে সনাক্ত করেই ৩৩২নং দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। তবে মূল রহস্যের বিষয়টি হলো-নিয়মতান্ত্রিকভাবে জমিদাতার ন্যাশনাল আইডি কার্ড সংযোগ করার নিয়ম থাকলেও সেখানে শুধু জন্মসনদ জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপমা নাগকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। অনুসন্ধানে চৌদ্দগ্রামের গুনবতী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে দলিল লেখক চলে যান। তবে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে না থাকায় মুঠোফোনে দলিল সম্পর্কে জানান তহসিলদার ও সহকারী কমিনারের রিপোর্ট দেখে শতভাগ নিয়ম মেনেই দলিল সম্পাদন করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। 

নুরুল বাহারের দায়েরকৃত জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই আরিফ হোসেন জানান, জিডিটি তদন্ত করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দায়ের করা হবে। 

ভারত থেকে ইমো নাম্বারে আসল সুভাষ দেবনাথ জানান, ১৯৬৩ সালের পরে আমরা কেউ বাংলাদেশে যাইনি। বর্তমানে আমরা ভারতের নাগরিক। আমরা মৃত তরব আলী গংয়ের সাথে এক্সচেঞ্জ করেই বর্তমানে ভারতে বসবাস করছি। 

ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ ও ওয়ারিশ সনদ পায় এ বিষয়ে ঘোলপাশা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জাফরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অকিন্দ দেবনাথ ও সুভাষ দেবনাথ নামে আমি কোনও ভারতীয় নাগরিকের নামে জন্মসনদ প্রদান করিনি। কে বা কারা আমার স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতি করে সনদগুলো তৈরি করেছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত ভারতীয় নাগরীককে জন্মনিবন্ধন দেয়া এবং মামলার বিষয়ে অনুসন্ধানে গোলপাশা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান ও সচিব জানান স্বাক্ষরগুলো তাদের নয় এবং এ নামের কাউকে তারা চিনেন না। 

চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহম্মেদ জানান, ইউপি মেম্বার নুরুল বাহার আমানগন্ডা গ্রামের সনাতন পরিবারের ৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি ওয়ারিশ সনদ পাওয়ার আবেদন করেছিলেন তাতে সুভাষের নাম ছিল না কিংবা তাতে তারিখও উল্লেখ নেই।

মামলায় অভিযুক্ত ঘোলপাশা ইউপি সচিব দেলোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। ভারতীয় নাগরিকের কোন জন্মসনদে স্বাক্ষর করিনি। 

মামলায় অভিযুক্ত ঘোলপাশা ইউনিয়নের সাবেক ও মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বর্তমান তহশীলদার আবুল খায়ের দাবি করেন, কাগজপত্র সঠিক থাকায় আমি অকিন্দ দেবনাথ ও সুভাষ দেবনাথ নামীয় দুই ব্যক্তির জমা খারিজ প্রদান করি।

অভিযুক্ত নুরুল বাহার জানান, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ বিষয়ে আমি চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। 

চৌদ্দগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমিন সরকার বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশীলদাররা নামজারির প্রস্তাবনা দিলেই আমি তা অনুমোদন করিয়ে দেই। কেউ যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটায় তাহলে এর দায় সংশ্লিষ্ট তহশীলদারের।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র

প্রধান সম্পাদকঃ মোহাম্মদ আবুল বশির
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মনির হোসেন
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ৩৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫

মোবাইলঃ +৮৮ ০১৮১৩ - ৮১৮৬৯৬

ফোনঃ +৮৮ ০২ - ৫৫০১৩৯৩৯

ইমেইলঃ shwapnerbd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৮-২০২১ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।